সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার প্রথম ছবি ‘আশিকী’ মুক্তি পেয়েছে প্রায় মাসখানেক হয়ে গেল। প্রথম ছবি মুক্তির উচ্ছ্বাস এখনো নুসরাতের চোখে মুখে লেগে আছে। ছবি মুক্তির পর তার সাথে যুক্ত হয়েছে আলাদা জৌলুশ, নায়িকা জীবন। একসময়ের তুখোড় বক্তা এই সময়ের সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী। জীবনের পটভূমি পরিবর্তনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন হয়েছে কী না, পরবতর্ী কাজের পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয় জানতে আনন্দ আলো হাজির হয়েছিল নুসরাত ফারিয়ার কাছে। জানতে চাওয়া হল কেমন লাগছে নতুন জীবন? জানালেন, অসাধারণ লাগছে। এখন একটাই লক্ষ্য শুধু কাজ আর কাজ। তাহলে বিয়ে? কাজের ভিড়ে কী পারিবারিক জীবন হারিয়ে যাবে! যেহেতু নুসরাত চলচ্চিত্রের নায়িকা তাই স্বাভাবিকভাবেই বিয়ে করবেন আরো দশ বছর কিংবা আরো পরে এটাই স্বাভাবিক। সাধারণত অভিনয় ক্রেজে থাকা অবস্হায় নায়িকারা এটাই বলে থাকেন। তবে নুসরাত জানালেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তিনি বিয়ে করতে চান এবং কারণ হিসেবে বললেন, আমাদের দেশের পারিবারিক ও সামাজিক রীতিনীতির কথা। সামাজিক রীতিনীতি মেনে বয়স পঁচিশের দিকেই বিয়ে করতে চান তিনি। যদিও হিসেবটা তিনি কতটা পরিপক্কতার সাথে দিয়েছেন সেটা সময়ই বলে দিবে। সিনেমার পর্দায় নিজেকে দেখার অনুভূতি কেমন ছিল? নুসরাত জানালেন, আমি প্রথম ‘আশিকী’ দেখি কলকাতায়। কারণ আমাদের সাত দিন আগে সিনেমাটি সেখানে মুক্তি পায়। নিজের প্রথম সিনেমা এমনিতেই প্রচণ্ড উত্তেজনা কাজ করছিল তার ওপরে আবার সকালে ফ্লাইট মিস করি। দুপুরের ফ্লাইটে কলকাতায় পৌঁছাই। ফ্লাইট থেকে নামার পর এত এত ক্যামেরা, ফ্ল্যাশ, অ্যাকশন শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় সাংবাদিকদের ইন্টারভিউ পর্ব। কিন্তু মনের কোনে সিনেমায় নিজেকে দেখার আকুলতা কাজ করছিল। অভিনেতা অঙ্কুশ হয়তো বুঝেছিল ব্যাপারটা। সিনেমার ইন্টারভ্যালের সময় ইন্টারভিউ দেব বলে আমাকে সিনেমাটি দেখার পথ করে দেয় সে। তারপর আমি সিনেমাটি দেখলাম। প্রথম দশ মিনিট দেখে আমার মনে হয়েছে আমি অভিনয় করছি। কিন্তু পরের সময়গুলোতে আর সেটা মনে হয়নি। আমি তখন চরিত্রের সাথে মিলে মিশে গেছি। মনে হয়েছে আমি আশিকীর নায়িকা শ্রুতিকে দেখছি।
নিজের পারফর্মেন্সে সন্তুষ্ট নুসরাত। তার ফেসবুক ফলোয়ার একুশ লাখ। ‘আশিকী’ ছবি মুক্তির পর ফেসবুক ফলোয়ারদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি একটি উন্মুক্ত মাধ্যম এখানে যে কেউই তার মতামত পেশ করতে পারে। নেগেটিভ মতামত আসবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে পজেটিভ দিক হচ্ছে, প্রথম সিনেমা হিসেবে নেগেটিভ মন্তব্যকারীদেরও কেউ আমাকে বলেনি যে আমি অভিনয় পারি না, কিংবা আমার অভিনেত্রী হওয়ার যোগ্যতা নেই। প্রত্যেক ভক্তই বলেছে, তোমার পারফর্মেন্স অসাধারণ ছিল।
আপনার সামনে যে চরিত্রটি ছিল আপনার কী মনে হয়েছে সেটাকে যথাযথভাবে আশ্বস্ত করতে পেরেছেন? উত্তরে নুসরাত জানান, হ্যাঁ সেটা সত্যিকার অর্থেই মনে হয়েছে। তবে পাশাপাশি এটাও মনে হয়েছে আমি যদি আরেকটু সময় পেতাম তাহলে আরো ভালো করতে পারতাম। আমার সামনে মাত্র ৩১ দিন সময় ছিল। এরমধ্যেই ছবির গান থেকে শুরু করে সবই করতে হয়েছে। সিনেমায় নবাগত হিসেবে একেকটি দৃশ্য চার পাঁচবার টেকের সুযোগ ছিল না। আমার মনে হয়েছে আমি পেরেছি। ‘আশিকী’ মুক্তির পরে মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতন ঘটনা ঘটেছে যেটা সচরাচর সিনেমা জগতে ঘটে না। বলা হয়ে থাকে আমাদের বেশির ভাগ শিল্পীরা নাকি ছিদ্রান্বেষী। একজন আরেকজনের পেছনে সবসময় লেগে থাকে। সময়ের সাথে সাথে বিষয়টির বোধ হয় অবসান ঘটতে যাচ্ছে। এখনকার শিল্পীরা একে অন্যের ভালো কাজকে প্রশংসা করছেন। ‘আশিকী’ সিনেমার কাস্টিংয়ের সময় জাজ মাল্টিমিডিয়ার বড় প্রোডাক্ট মাহিয়া মাহী ও নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে বেশ একটা নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। গুঞ্জন ওঠে মাহিয়া মাহীর জায়গায় নুসরাতকে নেয়া হচ্ছে… ইত্যাদি ইত্যাদি। সিনেমা মুক্তির পরে মাহীকে প্রশ্ন করা হয় কেমন লেগেছে নুসরাতের অভিনয়? মাহী বলেছেন, ফারিয়ার অভিনয় আমি দেখিনি তবে বিভিন্ন মিডিয়ায় তার দুটো গানের ভিডিও দেখেছি। নুসরাতের এক্সপ্রেশন এক কথায় অসাধারণ। এছাড়া তার ফ্যাশন সচেতনাতাও আমাকে মুগ্ধ করেছে। আর বরাবরই আমি তার স্টাইলের ভক্ত। আমার মনে হয় সে লেগে থাকলে ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে। মাহীর এমন পজেটিভ অভিব্যক্তিকে কীভাবে দেখছেন? জিজ্ঞাসা করলে নুসরাত উচ্ছ্বসিত হয়ে মাহীকে ধন্যবাদ জানান। নিজের প্রথম সিনেমা, নিজেকে কীভাবে অভিনেত্রী হিসেবে প্রস্তুত করেছিলেন? নুসরাত জানান, ‘আশিকী’ ছবিতে কাস্টিং হবার পর আমাকে জানানো হয় আগামী ৬ থেকে ৮ মাস ক্যামেরার সামনে আসা যাবে না। আর এই সময়ে আমাকে দেশ বিদেশের মোট ২৮টি চলচ্চিত্র ধরিয়ে দেয়া হয় দেখার জন্য। মূলত এই সিনেমাগুলো দেখেই অভিনয়ের অনেক কিছু শিখেছি আমি। যার কারণে খুব একটা সমস্যা হয়নি। আশিকী ছবির প্রথম অংশ ছিল অভিনয়ে ভরা এবং পরের অংশ ছিল অভিব্যক্তিতে ভরা। প্রস্তুতিমূলক ছবিগুলো দেখে অভিনয় যতখানি না শিখতে হয়েছে তার চেয়ে বেশি শিখতে হয়েছে এক্সপ্রেশন। চোখ আর ঠোঁট দিয়ে বোঝাতে হয়েছে আমি কী বলতে চাই। সব ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আমি প্রস্তুত। একটা চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করাই আমার দায়িত্ব। চরিত্রটি যদি দুই মিনিটের হয় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ আবার দশ মিনিটের হলে সেটাও আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা-কলকাতা এরপরে বোম্বে। ঢাকার পরে কলকাতা জয়ের কাছাকাছি। এরপরে বোম্বে। কেমন লাগছে জানতে চাইলে নুসরাত বলেন, প্রত্যেকটা কাজই আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নভেম্বর থেকে আমি যে প্রজেক্টে কাজ করতে যাচ্ছি সেখানে আমার চরিত্র একেবারেই ভিন্ন। ভালো লাগছে যে ডিরেক্টররা সিনেমায় আমার চরিত্র নিয়ে চিন্তা করছেন।
‘আশিকী’ পরবর্তী কাজ নিয়ে ব্যস্ত এখন নুসরাত। অনেকগুলো প্রজেক্টের মধ্যে দুটো সিনেমা হাতে আছে। একটির নাম প্রহরী। এই ছবিতে তার সাথে আরেফিন শুভ আছেন। নুসরাতের পরের প্রজেক্টের নাম ‘গাওয়া’। এটি বোম্বের ফিল্ম। এই মুভিটা শুরু হতে হতে আগামী বছর চলে আসবে বলে জানালেন নুসরাত। মুভির প্রি-প্রোডাকশন চলছে মাত্র। এই ছবিতে নুসরাতের সাথে আছেন ইমরান হাশমী, পায়েল সরকার, নেওয়াজ আলী সিদ্দিকী।